বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের পবিত্রস্থান পানিহাটি সম্পর্কে জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল গ্রন্থে উল্লেখ আছে
পানিহাটি সম গ্রাম নাহি গঙ্গাতীরে ।
বড় বড় সমাজ সব পতাকা মন্দিরে ।।
কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘চৈতন্য চরিতামৃত’ এবং বৃন্দাবন দাসের চৈতন্য ভগবতে’ এই গ্রামের উল্লেখ রয়েছে। চৈতন্য যুগ থেকে নিত্যানন্দ ও তাঁর পুত্র বীরভদ্র গোস্বামী এখানে স্থায়ী বাসিন্দা।
পানিহাটিতে অবস্থিত শ্রীচৈতন্যদেবের অন্তরঙ্গ পার্ষদ রাঘব পন্ডিতের শ্রীপাটের মাধবীলতা কুঞ্জে আছে রাঘব পন্ডিতের সমাধি। তাঁর পুজিত মদনমোহন বিগ্রহের নিত্য পূজা হয়ে থাকে। তাছাড়া শ্রীচৈতন্যদেবেরও নিত্য পূজা হয়। শ্রীচৈতন্যদেবের চরণ চিহ্ন আছে এখানে। গঙ্গাতীরে অবস্থিত সুপ্রাচীন বটবৃক্ষ নিচে চৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ বিশ্রাম করেছিলেন এ রকম জনশ্রুতি। বটবৃক্ষের মূল বেষ্টন করে বেদী তৈরি হয়েছে। একটি ফলকে উৎকীর্ণ আছে তাদের আগমণের তথ্য। বটগাছের কাছেই পূরানো ঘাটের ভগ্নাবশেষে একটি প্রস্তর ফলকে উল্লাখ আছে যে, এটি নির্মিত হয় হিন্দু আমলে। তাছাড়া পুরী থেকে প্রত্যাবর্তন সময় নৌকা থেকে এখানে নেমেছিলেন শ্রী চৈতন্য কার্তিকী কৃষ্ণা দ্বাদশী তিথিতে। সেদিন ছিল রবিবার। তাঁর আগমন স্মারক উৎসব ও মেলা হয় প্রতিবছর কার্তিক মাসের কৃষ্ণা দ্বাদশী তিথির পরের রবিবারে।
সপ্তগ্রামের রাজকুমার রঘুনাথ দাস গোস্বামী পানিহাটির বটগাছের নিচে নিত্যানন্দের সাথে দেখা করেন। তাঁদের চিঁড়ে দই খাওয়ান। দন্ড মহোৎসব নামে পরিচিত এই ভোজন মহোৎসব। জৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে আয়োজিত মহোৎসবে বহু ভক্ত বৈষ্ণব মিলিত হয়ে থাকেন।
বটগাছের কাছের কাছেই একটি ছোট ঘরের মধ্যে শ্রীচৈতন্যদেবের চরণচিহ্ন আছে। রাঘব পন্ডিতের গৃহে অবস্থান সময়ে নিত্যানন্দ গঙ্গাতীরের বিভিন্ন গ্রামে প্রেমধর্ম প্রচার করেছিলেন।
পানিহাটির আরও একটি বটগাছের নিচে বৃন্দাবনের চৌষট্টি মহান্তের একটি স্মৃতি সমাধি মন্দির আছে। এখানে বহু মহাপুরুষ ও ভক্তের স্মৃতি মঞ্চ এবং প্রস্তর ফলক রয়েছে। তাছাড়া শ্রীগৌরাঙ্গ গ্রন্থমন্দিরে আছে বহু বৈষ্ণব ভক্তের স্মৃতি চিহ্ন।মহানির্বাণ মঠের প্রতিষ্ঠাতা অবধূত ঞ্জানানন্দ স্বামীর জন্মভিটায় নির্মিত হয়েছে ‘কৈবল্যমঠ’। মঠের কাছে আনন্দময়ী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন আগড়পাড়ার দ্বিজেন্দ্রকুমার নাগ। মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয় দেবী আনন্দময়ী। তাছাড়াও এখানে অন্যান্য দেবদেবীর বিগ্রহ আছে।
খ্রীষ্টীয় তৃতীয় শতকের শেষে সপ্তগ্রামের মহারাজা চন্দকেতু পানিহাটিতে গড় নির্মাণ করেছিলেন। ঐ গড়ের ভিতরে ছিল ভবানী কালী মূর্তি। সেজন্য গড়টি পরিচিত ছিল ভবানীগড় নামে। সমগ্র অঞ্চলটি লোক মুখে হয় ভবানীপুর। এই মহারাজা চন্দকেতুর নাম উল্লেখ করা হয়েছে কুতব মিনারের পাশের লৌহস্তম্ভে। পানিহাটি ও সোদপুর থেকে ছয় কি.মি. পূর্বে নাটাগড়ে আছে একটি প্রাচীন গড়। এখানে শিবমন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। বেড়াচাঁপা-দেগঙ্গা থেকে পানিহাটিতে রাজার তৈরি পয়ঃপ্রণালীর নিদর্শন আছে।